গর্ভকালীন সময়ে নারীর শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে – 10 Body Changes During Pregnancy

গর্ভকালীন সময়ে নারীর শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন ঘটে - 10 Body Changes During Pregnancy

সুস্থ মা মানে সুস্থ সন্তান। এজন্য শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকার প্রয়োজন। গর্ভকালীন সময়ে নারীর শরীরে অনেক ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। তাই গর্ভবতী নারীর শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে আজকে আমাদের আয়োজন।

চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে: (Ten Changes to Your Body While Pregnant)

১. জরায়ু (Womb):

গর্ভাবস্থায় মায়ের জরায়ু প্রায় ৪০ গুন বড় হয়ে যায়। বাচ্চাধারনের শুরু থেকে একদম ডেলিভারির আগ পর্যন্ত সময়ে এই পরিবর্তন ঘটে।

২.স্তন (Breast):

গর্ভাবস্থায় প্রায় সকল নারীর স্তনে পরিবর্তন আসে। কারো কারো একদম গর্ভাবস্থার শুরু থেকে ব্যথা হয় স্তনে। নিপল কালো হয়ে যায়, বড় হয়ে যায়। কারো কারো বেলায় ৩-৪ মাসের সময়েই এমনিতেই /নিজে চাপ দিলে তরল বের হয়ে আসে। এটা হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। গর্ভাবস্থায় এটা একদমই স্বাভাবিক। প্রোজেস্টেরণ হরমোনের কারনে দুগ্ধনালীগুলো ডেভেলপ করে এবং তরল উৎপন্ন হয়। অনেকের আবার এই তরল আসেনা। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।

৩. ত্বক (Skin):

ত্বকে অনেক ধরনের ফাটা দাগ আসে। এটা খুবই কমন। অনেকের স্তনে, উরুতে, বিশেষ করে তলপেটে এই ফাটা দাগ বেশী দেখা যায়।

৪. ওজন (Weight):

গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়বেই। এসময়ে বিভিন্ন ধরনের খাবারের ক্রেভিং হয়, এবং বেশীর ভাগ মায়েরাই এসময় খাবারে ক্যালরি হিসাব না করেই খায়, যে জন্য ওজন বেড়ে যায়। BMI অনুযায়ী খাবার খেলে এসময়েও ওজন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

৫. শরীরে পানি আসা (Edema):

আমাদের শরীরের ৭০ ভাগ হচ্ছে পানি। গগর্ভাবস্থায় শরীরকে যেমন বাচ্চার কাছে ব্লাড পাঠাতে হয়,,তেমনি মায়ের যে বাড়তি চাহিদা সেটাও পূরন করতে হয়। আর এ সময় ফ্লুইডের পরিমান বেড়ে যায়। যার কারণে শরীরে পানি আসে, যেটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে কারোর আর সে সাথে শরীরে পানি আসে তাহলে এটা চিন্তার বিষয়। এজন্য নিয়মিত রক্তচাপ মেপে দেখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

৬. রক্তে পরিবর্তন (Blood Changes):

শরীরে পানি আসা যেমন স্বাভাবিক তেমনি রক্তে পরিবর্তন আসা মানে রক্তের পরিমান বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। রক্ত বাড়বে এ সময়, কারণ বাচ্চাকে রক্ত দিতে হবে। কিন্তু যে পরিমানে রক্ত বাড়ার কথা সে পরিমানে রক্ত বাড়েনা অনেকের, আর এজন্যই রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

৭. হৃদয়/হার্টের পরিবর্তন (Heart Changes) :

হার্টের কাজ হচ্ছে পাম্প করা। যখন বাচ্চাকেও ব্লাড পাঠাতে হয়, আবার শরীরকেও ব্লাড পাঠাতে হয়, তখন তার কাজ বেড়ে যায় এবং হার্টের উপর চাপ পরে৷ সে দ্রুত কাজ করতে চায়। অনেক বেশী সংকুচিত আর প্রসারিত হয়। এসময় অনেক মা এটা অনুভব করতে পারে। বিশেষ করে প্রথম ৩ মাস৷ অনকেই বলে,বুক ধড়ফড় করে, এটা হার্টের অতিরিক্ত চাপের কারনে।

৮.ফুসফুস (Lungs):

ফুসফুসের পরিবর্তনটা আসে গর্ভাবস্থার ৭ম-৮ম মাসে। এ সময় জরায়ুটা পূর্বের তুলনায় অনেক বড় হয়ে যায়। আর তখন পাজর,,ফুসফুসে চাপ লাগে। এজন্য এসময় অনেক মায়েরই শ্বাসকষ্টের মতো অনুভূত হয়, যাদের কিনা আগে কখনো শ্বাসকষ্ট /এ্যাজমার সমস্যা ছিলোই না। বা বুকে চিনচিন ব্যথা করে। যেটা হয় আসলে জরায়ু বড় হয়ে, ফুসফুসে একটা চাপ সৃষ্টি করার কারণে।

৯. পরিপাকতন্ত্র (Digestive System):

আমাদের যে খাদ্যনালী আছে, সেটা মুখ থেকে শুরু হয় এবং খাদ্যনালীতে গিয়ে শেষ হয়। আমরা যখন খাবার খাই সেটা খাদ্যনালী দিয়ে নেমে পরিপাকতন্ত্রে যায়। সে খাবার কিন্তু পরিপাকতন্ত্র থেকে আবার খাদ্যনালী হয়ে মুখে যায় না। কারন, পরিপাকতন্ত্র থেকে খাদ্যনালীর মাঝে একটা গেইট থাকে,যেটা বন্ধ থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় এই গেইট টা অনেক দূর্বল হয়ে যায়। যার কারনে এ সময় খাবার পরিপাকতন্ত্র থেকে মুখে চলে আসতে পারে বা খাদ্যনালীতে উঠে যেতে পারে। এজন্য এ সময় বমি হয় বা বমি বমি ভাব হয়।

১০. হরমোন (Hormones):

ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোনের লেভেল বেড়ে যায়। যার কারনে হরমোনাল বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। ক্লান্তি বা অবসাদ, মুড সুইং হয়।

পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই, এই শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সকল গর্ভবতী নারীই যায়। যেটা খুব স্বাভাবিক। আসুন এই পরিবর্তনগুলো মেনে নেই এবং গর্ভাবস্থা উপভোগ করি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top